অ্যাপে জানুন অটোরিক্সার সঠিক ভাড়া

প্রকাশঃ নভেম্বর ৯, ২০১৫ সময়ঃ ৭:১৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:২২ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষন ডেস্ক

অ্যপসম্প্রতি রাজধানীতে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার জন্য নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তারপরও মিটারে যাওয়া নিয়ে যাত্রী ও চালকদের মধ্যে তর্কাতর্কি লেগেই থাকে। এবার এই সমস্যার একটা প্রযুক্তিগত সমাধান তৈরি করেছেন অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার সারোয়ার মিরাল।

‘সিএনজি ফেয়ার ক্যালকুলেটর’ নামের এই অ্যানড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি গত ৫ নভেম্বর থেকে গুগল প্লে-স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। মাত্র পাঁচ দিনে পাঁচ হাজারেরও বেশি বার অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করা হয়েছে প্লে-স্টোর থেকে।

অ্যাপটিতে পাড়ি দেওয়া পথের দূরত্ব এবং রাস্তায় জ্যামের জন্য বসে থাকা অলস সময়ের জন্য আলাদা দুটি ঘর রয়েছে। এ ঘর দুটিতে যথাক্রমে অতিক্রান্ত দূরত্ব এবং অলস বসে থাকার জন্য ব্যয় হওয়া সময় উল্লেখ করলে খুব সহজেই অ্যাপটি বলে দেবে ভাড়া কত হয়েছে।

এরপরও সিএনজি অটোরিকশায় থাকা মিটারের ভাড়া এবং এই অ্যাপের হিসাবকৃত ভাড়ায় কোনো গড়মিল থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ জানালে সহায়তা পাওয়া যাবে। কেননা, অভিযোগকেন্দ্রের ফোন নম্বরগুলোও দেওয়া রয়েছে অ্যাপটিতে।

অ্যাপ্লিকেশনটির নির্মাতা সারোয়ার মিরাল সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। এরইমধ্যে বেসিস এবং বুয়েটসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকটি প্রফেশনাল কোর্সও করেছেন তিনি। বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় সিনিয়র অ্যানড্রয়েড ডেভেলপার হিসেবে কাজ করছেন।

কোন ভাবনা থেকে এমন একটি অ্যাপ তৈরি করলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মিরাল বলেন, ‘নতুন ভাড়া কার্যকরের পরও মিটারে ওঠা ভাড়া নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও যাত্রীদের মাঝে ঝামেলার ব্যাপারটি ফেসবুক এবং অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি। এ ছাড়া আমি নিজেও প্রতিনিয়ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চলাচল করি। এসব ঝামেলা দেখে খুব তাড়াহুড়া করেই অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করি। এখন দেখতে পাচ্ছি যে প্রতিদিনই অনেকে মেইল করে বা ফেসবুকের মাধ্যমে এর প্রশংসা করছেন, এতে ভালোই লাগছে।’

কথার মধ্যে সারোয়ার মিরাল আরো চমকপ্রদ একটি খবর জানান। এ বছরের শুরুর দিকে ‘ন্যাশনাল মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ট্রেইনার অ্যান্ড ইনোভেটিভ অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ শীর্ষক চার মাসব্যাপী একটি প্রজেক্ট চালায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

সেখানে ‘এক্সপেন্স ম্যানেজার’ নামক একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে মিরাল ৫১০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন এবং ‘বেস্ট পারফম্যান্স অ্যাওয়ার্ড’ পান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন। এই অ্যাপ্লিকেশনটিও গুগল প্লে-স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে।

CNG APP২ঢাকাতেই জন্ম নেওয়া এবং এখানেই বেড়ে ওঠা তরুণ এ সফটওয়্যার নির্মাতা তাঁর নতুন অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কে জানান, কোনো যাত্রী অটোরিকশায় যাত্রা শুরুর পর থেকে গন্তব্য পর্যন্ত অতিক্রান্ত দূরত্বের সঠিক তথ্য পাবেন। এ ক্ষেত্রে গুগল ম্যাপকে কাস্টমাইজ করে তা এই ‘সিএনজি ফেয়ার ক্যালকুলেটর’ অ্যাপ্লিকেশনের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ওই ম্যাপ থেকে যাত্রা শুরুর স্থান এবং গন্তব্যের স্থানে মোবাইলের স্ক্রিনে স্পর্শ করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে দূরত্বের পরিমাণ জানা যাবে।

এটা নিয়ে আরো কোনো চিন্তাভাবনা আছে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শুধু সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করে অভিযোগ করা যায়। এই সময়ের আগে পরে কিন্তু অভিযোগ করা যাচ্ছে না। সেই সীমাবদ্ধতা দূর করতে অ্যাপটির পরবর্তী সংস্করণে আরেকটি সুবিধা যোগ করা হবে। তখন শুধু অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করেই সংশ্লিষ্ট চালক এবং ওই অটোরিকশার নম্বরপ্লেটের ছবি তোলা যাবে এবং এর মাধ্যমে যেকোনো সময় অভিযোগ জমা দেওয়া যাবে এবং অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ বাড়বে।’

মোবাইল অ্যাপ নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে দাবি করে সারোয়ার মিরাল বলেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে এর ক্ষেত্র আরো সুবিস্তৃত হবে। সরকারও এ লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষ লোকবল গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তাই তরুণ শিক্ষার্থীদের এখনই কাজে নেমে পড়তে আহ্বান করব।’

ইতিমধ্যেই রাজধানীর কল্যাণপুরে ‘অটোমোটিভ আইটি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ উদ্যোগে ‘অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপমেন্ট কোর্স’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছেন মিরাল। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক কম ফিয়ের বিনিময়ে সেখানে সফটওয়্যার উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি। এ ধরনের একটি একাডেমি চালু করার ইচ্ছেও রয়েছে তাঁর।

অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন।

প্রতিক্ষণ/এডি/বিএ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G